Showing posts with label alk035. Show all posts
Showing posts with label alk035. Show all posts

প্রিয়-বিরহ

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

বিনা প্রয়োজন                 রম্য উপবন,
কন্টক-কানন প্রায়;
পুষ্প বিরচণ                 কোমল শয়ন,
তৃণশয্যা তুলনায়।
সুভক্ষ্য নিচয়                 বিষময় হয়,
লুকায় সুতার তার;
নিরখি নয়নে                 দিবস তখনে
তমঃপূর্ণ ত্রিসংসার।
কিন্তু যে সময়,                 প্রিয় সঙ্গে রয়,
বন উপবন হয়।
দুর্বাদলচয়                 সুখ-শয্যা হয়,
পুষ্পশয্যা তুল্য নয়;
পর্ণ-বিরচিত                 উটজ নিশ্চিত
সৌধসম শোভা ধরে;
তিক্ত ফলচয়                 হয় সুধাময়
অহো কি তৃপ্তি বিতরে!
ঘোর তমস্বিনী                 সে অমা-যামিনী
সেই পৌর্ণমাসী হয়;
দুঃখ ঘটো যায়                 সুখবোধ তায়,
অসুখ লেশ না রয়।

ঈশ্বরই আমার একমাত্র লক্ষ্য

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যেই ফুল নিরন্তর                 মম মন মধুকর
মধুপানে উতসুক হৃদয়;
ফুল্ল যেই সর্বক্ষণে                 সময়ের বিবর্তনে
পরিম্লান কভু নাহি হয়।
সেই ধন অন্বেষণে                 ভ্রমি আমি বনে বনে
সজল নঢনে অনুক্ষণ;
সম্বন্ধ বন্ধন যার                 বদ্ধ রহে অনিবার,
নাহি ঘুচে হলেও নিধন।
সেই সুখময় পথে                 চড়িয়া মানসরথে
নিয়ত হতেছি অগ্রসর;
যার প্রান্তে সুনিশ্চিত                 সর্বক্ষণ বিরাজিত
নিত্য সুখধাম মনোহর।
সেই প্রেম সিন্ধুজলে                 আত্মমন কুতূহলে
সত্য সত্য করছি মগন,
সদা সেই স্থির রয়                 বিচ্ছেদ তরঙ্গ ভয়
যার মাঝে নাহি কদাচন।
সেই সর্ব বরণীয়                 ত্রিজগত স্মরণীয়
সম্রাটের আমি হে কিঙ্কর।
যাহার চরণতলে                 নিখিল নৃপতিদলে
নোয়ায় মুকুট নিরন্তর।

শারদ-তরঙ্গিণী

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

একদিন এ সময় তরঙ্গিনী-তীরে,
চলিলাম চিন্তাকুল চিতে ধীরে ধীরে |
তটিনীর তটপরি সিকতা-আসনে,
বসিলাম ভাবময়ী কল্পনার সনে।
তরঙ্গিণী-তনু তনু শারদাগমনে,
নিরখি নয়নে আমি নিরখি নয়নে;
সুধালেম "অয়ি কলস্বরা স্রোতস্রতি!
আজ কেন তোমা হেরি দীনা ক্ষীণা অতি?
বরষার সময়জ প্রভাবনিচয়,
কেন কেন কেন আজ দৃশ্য নাহি হয়?
তরঙ্গিণী! কোথা তব তরঙ্গের রঙ্গ,
হেরি যাহা, পোতারহী পাইত আতঙ্ক?
যে সকল লহরী, করিয়া ঘোর স্বন,
তরণীর হৃদয় করিত বিদারণ,
কোথা তাহা? কোথা সেই দ্রুতগামী নীর
চলিত যা মদগর্বে অতিক্রমি তীর?
কূলস্থ বিহঙ্গাশ্রম মহীরুহগণ
করিত তাদের কোপে মূল উন্মূলন!
অয়ি ধুনি! কোথা তব সেই মহাধ্বনি,
ভয় জন্মাইত মেন যার প্রতিধ্বনি?''
শুনিয়া আমার ভাষ অতি কলস্বরে,
তরঙ্গিণী উত্তর করিলা তদন্তরে---
"শুনহে হে ভাবুক! এই জানিবে নিশ্চয়,
চিরদিন একদশা কাহারো না রয় |"

রজনী

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যে কালে রজনী, নিদ্রা স্বজনীর সনে,
আবির্ভূতা হয় আসি অবনী-ভবনে;
যে কালে সমুন্দ গতি করিয়া ধারণ
জুড়ায় জগৎ-প্রাণ জগৎ-জীবন;
যে কালেতে সীমাশূণ্য আকাশমণ্ডল
অসংখ্য তারকাজালে হয় সমুজ্জ্বল;
যে কালে বিরল ক্ষুদ্র, জলধর দলে
অনতিবেগেতে ধায় গগন-মণ্ডলে;
যে কালে যামিনীনাথ সুধাময় করে
ধরণীর তপ্ত তনু সুশীতল করে;
যে কালে নিরখি স্বীয় প্রিয় প্রাণেশ্বরে
কুমুদিনী প্রফুল্লিত হয় সরোবরে;
যে কালে অমৃকপায়ী চকোর-নিকরে
সুধা পিয়ে প্রিয়গুণ গায় কলস্বরে,
যে কালে রজনী পরি চন্দ্রিকা-বসন,
স্বকান্তের সনে করে প্রিয় সম্ভাষণ;
যে কালে প্রকৃতি করি ধীরতা ধারণ
ভাবুকের ভাবপুঞ্জ করে উদ্দীপন;
যে কালে কোবিদকুল কল্পনার সনে
রত হয় নব নব সদ্ভাব-চিন্তনে;
ধিক ধিক বৃথা কার মানব জনম
এ কালে অলীকামোদে মত্ত যার মন।
ভবের ভাবের ভাবুক যে বা নয়,
নিদ্রায় বিমুগ্ধ সেই রহে এ সময়।
এ সময় ভক্তি-রস-প্রবণ অন্তরে,
ধন্য সে, যে স্মরে অখিল ঈশ্বরে।
বিবেক-আসনে হয়ে সমাসীন মন!
এ সময় স্মর না সে সংসার-শরণ?

প্রণয়-কানন

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

অতিশয় ভয়ঙ্কর প্রণয়-কানন,
অশেষ আতঙ্ক-তরু পরশে গগন।
শাখা-প্রশাখায় তারা গহন এমন,
প্রবেশে না মাঝে জ্ঞান-তড়ন-কিরণ।
হতাশা-কন্টকীলতা বেষ্টিত তথায়,
পায় পায় বিদ্ধ হয় প্রেমিকের পায়।
বিষম বিরহ-ব্যাঘ্র বিকট-বদন,
নিয়ত এ বনে করে ভীষণ গর্জন।
নিনাদে তাহার হায়! নিনাদে তাহার,
কত প্রেমিকের প্রাণত্যজে দেহাগার।
প্রিয়-প্রেম-সুখ-মৃগ, এ প্রেম গহনে,
হরে প্রেমাকাঙ্ক্ষি-মন, মোহন নর্তনে।
করিতে গহন তারে অনেকেই ধায়;
বিরহ-শার্দুল-গ্রাসে শেষে মারা যায়।
যে প্রেমিক সাহস-মাতঙ্গপরি চড়ি
সহিষ্ণুতা দৃঢ়বর্মে সর্বাঙ্গ আবরি,
নির্ভয়ে প্রবেশে প্রেম-বিপিন মাঝার,
নিরাশা-কন্টক নাহি ফুটে দেহে তার;
বিরহ-শার্দুল নারে গ্রাসিবারে তায়,
প্রিয়-প্রেম-সুখ-মৃগ দরিতে সে পায়।
হাফেজ! যদ্যপি পার এরূপ করিতে,
প্রিয়-প্রেম-সুখ-মৃগ পারিবে ধরিতে।

পাপ-কেতকী

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

একদিন ধীরে ধীরে মনের উল্লাসে
উপনিত কেতকী-কুশুমশ্রেণী পাশে।
হেরিলাম কত শত শত মধুকর,
সুসোরেভ হয়ে তারা বিমুগ্ধ-অন্তর,
মধুপূর্ণ কমল করিয়া পরিহার,
মধু-আশে কেতকীতে করিছে বিহার;
কিন্তু মধু কোথা পাবে সে কেতকীফুলে!
শুধু হয় ছিন্নপক্ষ কন্টকের হুলে।
তথাপি সে বিমূর অবোধ অলিগণ,
উড়িয়া কমসদলে না করে গমন।
ভাবিলাম এইরূপ মানব সকল,
ত্যজি পরিমলপূর্ণ তত্ব-শতদল;
সুখ-সুধা আশে সদা প্রফুল্ল অন্তরে,
বিষয় কেতকীবনে অনিক্ষণ চরে।
কোথা পাবে সে অমিয়, ব্যর্থ আকিঞ্চন,
সার দুঃখ কন্টকের ডাতনা ভীষণ।
তবু তত্ব-সরজিতে না করে বিহার;
ধিক রে মানব তোরে ধিক শতবার।

তরু


কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

এই যে বিটপি-শ্রেণী হেরি সারি সারি-
কী আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি!
কেহ বা সরল সাধু-হৃদয় যেমন,
ফল-ভারে নত কেহ গুণীর মতোন।
এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে,
ইচ্ছা যার দেখ দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।
যখন মানবকুল ধনবান হয়,
তখন তাদের শির সমুন্নত রয়।
কিন্তু ফলশালী হলে এই তরুগণ,
অহংকারে উচ্চশির না করে কখন।
ফলশূন্য হলে সদা থাকে সমুন্নত,
নীচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত।

দুখের তুলনা

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

একদা ছিল না 'জুতো' চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !
দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,
অমনি 'জুতো'র খেদ ঘুচিল আমার,
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?

বুঝিবে সে কিসে

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।

যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।

অপব্যয়ের ফল

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

যে জন দিবসে মনের হরষে

জ্বালায় মোমের বাতি,

আশু গৃহে তার দেখিবে না আর

নিশীথে প্রদীপ ভাতি।