Showing posts with label . Show all posts
Showing posts with label . Show all posts

গোলামের তেজ

কালিদাস রায়

[“আহরণী” কাব্যগ্রন্থ থেকে]

ঘুড়ি ডেকে কয় “ওরে প্রজাপতি, যোজন খানেক তলে,
রোস্ তুই, তবু দেখি তোরে শুধু দিব্য দৃষ্টি-বলে।
আচ্ছা বলত,---গ্রহমণ্ডলে চলা-ফেরা দেখে মোর,
অবাক হ'য়ে কি রোসনাক চেয়ে হিংসা হয় না তোর?”

প্রজাপতি কয় “মর, কি বুদ্ধি, কাগুজে চিড়িয়া ঘুড়ি,
আমি কেন তোরে হিংসে করব ? মধু খেয়ে খেয়ে উড়ি।
তুইত বন্দী, করনা বড়াই যতই উপরে থেকে,
স্বাধীন কখনো হিংসে করে কি গোলামের তেজ দেখে?”

গুচ্ছ কবিতা

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

১.
থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক
একলা থাকার খুব দুপুরে
একটি ঘুঘু ডাকুক
২.
দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা
বুঝতে কেন পাছো না ছাই
মানুষ আমি, যন্ত্র না!
৩.
চোখ কেড়েছে চোখ
উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক।

গোলামের গর্ভধারিণী

হুমায়ুন আজাদ

আপনাকে দেখিনি আমি; তবে আপনি
আমার অচেনা
নন পুরোপুরি, কারণ বাঙলার
মায়েদের আমি
মোটামুটি চিনি, জানি। হয়তো
গরিব পিতার ঘরে
বেড়ে উঠেছেন দুঃক্ষিণী
বালিকারূপে ধীরেধীরে;
দুঃক্ষের সংসারে কুমড়ো ফুলের
মতো ফুটেছেন
ঢলঢল, এবং সন্ত্রস্ত ক’রে
তুলেছেন মাতা
ও পিতাকে। গরিবের ঘরে ফুল
ভয়েরই কারণ।
তারপর একদিন ভাঙা পালকিতে চেপে
দিয়েছেন
পাড়ি, আর এসে উঠেছেন আরেক গরিব
ঘরে;
স্বামীর আদর হয়তো ভাগ্যে
জুটেছে কখনো, তবে
অনাদর জুটেছে অনেক। দারিদ্র্য,
পীড়ন, খণ্ড
প্রেম, ঘৃণা, মধ্যযুগীয়
স্বামীর জন্যে প্রথাসিদ্ধ
ভক্তিতে আপনার কেটেছে জীবন।
বঙ্গীয় নারীর
আবেগে আপনিও চেয়েছেন বুক জুড়ে
পুত্রকন্যা,
আপনার মরদ বছরে একটা নতুন
ঢাকাই
শাড়ি দিতে না পারলেও বছরে বছরে
উপহার
দিয়েছেন আপনাকে একের পর এক
কৃশকায়
রুগ্ন সন্তান, এবং তাতেই আপনার
শুষ্ক বুক
ভাসিয়ে জেগেছে তিতাসের তীব্র
জলের উচ্ছ্বাস।
চাঁদের সৌন্দর্য নয়, আমি জানি
আপনাকে মুগ্ধ
আলোড়িত বিহ্বল করেছে সন্তানের
স্নিগ্ধ মুখ,
আর দেহের জ্যোৎস্না। আপনিও
চেয়েছেন জানি
আপনার পুত্র হবে সৎ, প্রকৃত
মানুষ। তাকে
দারিদ্র্যের কঠোর কামড় টলাবে
না সততার
পথ থেকে, তার মেরুদণ্ড হবে দৃঢ়,
পীড়নে বা
প্রলোভনে সে কখনো বুটদের সেজদা
করবে না।
আপনার উচ্চাভিলাষ থাকার তো কথা
নয়, আপনি
আনন্দিত হতেন খুবই আপনার পুত্র
যদি হতো
সৎ কৃষিজীবী, মেরুদণ্ডসম্পন্ন
শ্রমিক, কিংবা
তিতাসের অপরাজেয় ধীবর। আপনি
উপযুক্ত
শিক্ষা দিতে পারেন নি
সন্তানকে;- এই পুঁজিবাদী
ব্যবস্থায় এটাই তো স্বাভাবিক,
এখানে মোহর
ছাড়া কিছুই মেলে না, শিক্ষাও
জোটে না। তবে এতে
আপনার কোনো ক্ষতি নেই জানি;
কারণ আপনি
পুত্রের জন্যে কোনো রাজপদ, বা ও
রকম কিছুই
চান নি, কেবল চেয়েছেন আপনার
পুত্র হোক
সৎ, মেরুদণ্ডী, প্রকৃত মানুষ।
আপনার সমস্ত
পবিত্র প্রার্থনা ব্যর্থ ক’রে
বিশশতকের এই
এলোমেলো অন্ধকারে আপনার পুত্র
কী হয়েছে
আপনি কি তা জানেন তা, হে অদেখা
দরিদ্র জননী?
কেনো আপনি পুত্রকে
পাঠিয়েছিলেন মুঘলদের
এই ক্ষয়িষ্ণু শহরে, যেখানে
কৃষক এসে লিপ্ত
হয় পতিতার দালালিতে, মাঠের
রাখাল তার
নদী আর মাঠ হ’য়ে ওঠে হাবশি
গোলাম?
আপনি কি জানেন, মাতা, আপনার
পুত্র শহরের
অন্যতম প্রসিদ্ধ গোলাম আজ?
আপনি এখন
তাকে চিনতেও ব্যর্থ হবেন,
আপনার পুত্রের দিকে
তাকালে এখন কোনো মস্তক পড়ে না
চোখে, শুধু
একটা বিশাল কুঁজ চোখে পড়ে।
দশকে দশকে
যতো স্বঘোষিত প্রভু দেখা
দিয়েছেন মুঘলদের
এ-নষ্ট শহরে, আপনার পুত্র তাদের
প্রত্যেকের
পদতলে মাথা ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে
পৃষ্ঠদেশ জুড়ে
জন্মিয়েছে কুঁজ আর কুঁজ; আজ তার
পৃষ্ঠদেশ
একগুচ্ছ কুঁজের সমষ্টি;-
মরুভূমিতে কিম্ভুত
বহুকুঁজ উটের মতোই এখন দেখায়
তাকে।
সে এখন শহরের বিখ্যাত গোলাম
মজলিশের
বিখ্যাত সদস্য, গোলামিতে সে ও
তার ইয়ারেরা
এতোই দক্ষ যে প্রাচীন,
ঐতিহাসিক গোলামদের
গৌরব হরণ ক’রে তারা আজ মশহুর
গোলাম
পৃথিবীর। এখন সে মাথা তার
তুলতে পারে না,
এমনকি ভুলেও গেছে যে একদা তারও
একটি
মাথা ছিলো, এখন সে বহুশীর্ষ
কুঁজটিকেই মাথা
ব’লে ভাবে। খাদ্যগ্রহণের পর
স্বাভাবিক পদ্ধতিও
বিস্মৃত হয়েছে সে, প্রভুদের
পাদুকার তলে
প’ড়ে থাকা অন্ন চেটে খাওয়া ছাড়া
আর কিছুতেই
পরিতৃপ্তি পায় না আপনার পুত্র,
একদা আপনার
স্তন থেকে মধুদুগ্ধ শুষে নিয়ে
জীবন ধারণ
করতো যে বালক বয়সে। এখন সে
শত্রু পাখি
ও নদীর, শত্রু মানুষের, এমন কি
সে আপনার
স্তন্যেরও শত্রু। তার জন্য
দুঃক্ষ করি না, কতোই
তো গোলাম দেখলাম এ-বদ্বীপে
শতকে শতকে।
কিন্তু আপনার জন্যে, হে গরিব
কৃষক-কন্যা, দুঃক্ষী
মাতা, গরিব-গৃহিণী, আপনার জন্যে
বড় বেশি
দুঃখ পাই;- আপনার পুত্রের
গোলামির বার্তা আজ
রাষ্ট্র দিকে দিকে, নিশ্চয়ই তা
পৌঁছে গেছে তিতাসের
জলের গভীরে আর কুমড়োর খেতে,
লাউয়ের
মাঁচায়, পাখির বাসা আর চাষীদের
উঠানের কোণে।
তিতাসের জল আপনাকে দেখলে ছলছল
ক’রে
ওঠে, ‘ওই দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে’; মাঠে
পাখি ডেকে ওঠে, ‘দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে’;
আপনার পালিত বেড়াল দুধের বাটি
থেকে
দু-চোখ ফিরিয়ে বলে, ‘গোলামের
গর্ভধারিণীর
হাতের দুগ্ধ রোচে না আমার জিভে’,
প্রতিবেশী
পুরুষ-নারীরা অঙ্গুলি সংকেত
ক’রে কলকণ্ঠে
বলে, ‘দ্যাখো গোলামের
গর্ভধারিণীকে।’ এমন কি
প্রার্থনার সময়ও আপনি হয়তো বা
শুনতে পান
‘গোলামের গর্ভধারিণী, ধারিণী’
স্বর ঘিরে ফেলছে
চারদিক থেকে। আপনি যখন অন্তিম
বিশ্রাম
নেবেন মাটির তলে তখনো হয়তো
মাটি ফুঁড়ে
মাথা তুলবে ঘাসফুল, বাতাসের
কানে কানে ব’লে
যাবে, ‘এখানে ঘুমিয়ে আছেন এক
গর্ভধারিণী
গোলামের।’ ভিজে উঠবে মাটি
ঠাণ্ডা কোমল অশ্রুতে।
কী দোষ আপনার? মা কি কখনোও জানে
দশমাস
ধ’রে যাকে সে ধারণ করছে সে মানুষ
না গোলাম?

গরীবের সৌন্দর্য

হুমায়ুন আজাদ

গরিবেরা সাধারণত সুন্দর হয় না।
গরিবদের কথা মনে হ’লে সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে না কখনো।
গরিবদের ঘরবাড়ি খুবই নোংরা, অনেকের আবার ঘরবাড়িই নেই।
গরিবদের কাপড়চোপড় খুবই নোংরা, অনেকের আবার কাপড়চোপড়ই নেই।
গরিবেরা যখন হাঁটে তখন তাদের খুব কিম্ভুত দেখায়।
যখন গরিবেরা মাটি কাটে ইট ভাঙে খড় ঘাঁটে গাড়ি ঠেলে পিচ ঢালে তখন তাদের
সারা দেহে ঘাম জবজব করে, তখন তাদের খুব নোংরা আর কুৎসিত দেখায়।
গরিবদের খাওয়ার ভঙ্গি শিম্পাঞ্জির ভঙ্গির চেয়েও খারাপ।
অশ্লীল হাঁ ক’রে পাঁচ আঙ্গুলে মুঠো ভ’রে সব কিছু গিলে ফেলে তারা।
থুতু ফেলার সময় গরিবেরা এমনভাবে মুখ বিকৃত করে
যেনো মুখে সাতদিন ধ’রে পচছিলো একটা নোংরা ইঁদুর।
গরিবদের ঘুমোনোর ভঙ্গি খুবই বিশ্রী।
গরিবেরা হাসতে গিয়ে হাসিটাকেই মাটি ক’রে ফেলে।
গান গাওয়ার সময়ও গরিবদের একটুও সুন্দর দেখায় না।
গরিবেরা চুমো খেতেই জানে না, এমনকি শিশুদের চুমো খাওয়ার সময়ও
থকথকে থুতুতে তারা নোংরা করে দেয় ঠোঁট নাক গাল।
গরিবদের আলিঙ্গন খুবই বেঢপ।
গরিবদের সঙ্গমও অত্যন্ত নোংরা, মনে হয় নোংরা মেঝের ওপর
সাংঘাতিকভাবে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে দু’টি উলঙ্গ অশ্লীল জন্তু।
গরিবদের চুলে উকুন আর জট ছাড়া কোনো সৌন্দর্য নেই।
গরিবদের বগলের তলে থকথকে ময়লা আর বিচ্ছিরি লোম সব জড়াজড়ি করে।
গরিবদের চোখের চাউনিতে কোনো সৌন্দর্য নেই,
চোখ ঢ্যাবঢ্যাব ক’রে তারা চারদিকে তাকায়।
মেয়েদের স্তন খুব বিখ্যাত, কিন্তু গরিব মেয়েদের স্তন শুকিয়ে শুকিয়ে
বুকের দু-পাশে দুটি ফোড়ার মতো দেখায়।
অর্থাৎ জীবনযাপনের কোনো মুহূর্তেই গরিবদের সুন্দর দেখায় না।

শুধু যখন তারা রুখে ওঠে কেবল তখনি তাদের সুন্দর দেখায়

গ্রিনরোড

আব্দুল মান্নান সৈয়দ

একদিন কুলিরোড ছিলে।
হাঁটু অব্দি ডোবানো ধুলোয় ছিলে এক নির্জন তাপস।
অড়হরখেতে একদিন দেখেছিলাম তরুণ খরগোশ
যেন কোন প্রাকৃতিক নিবিড় নিখিলে
বিদ্যুচ্চমক তুলে মিশে গিয়েছিলো মটরশুঁটির খেতে।
লাল-কালো কুঁচফল পেড়েছি একদিন সান্দ্র ঝোপ থেকে
দেখেছি ধানখেত, কামময়, গভীর খোড়ল, কৈশোরক নিরুদ্বেগে,
কৌতূহলে। তারপর সপ্তর্ষির নৈশ সংকেতে

আমগাছ জামগাছ কাঁঠালগাছের শ্যাম
ক্রমাগত মুছে মুছে উঠে আসছে তরুণ বিল্ডিং,
নিভে যাচ্ছে ঘাস, উবে যাচ্ছে নিবিড় বৃষ্টির দিন;
তবু তোমাকে কেন্দ্র রেখে একদিন ঝরেছে যে-পাতার শিকল
ধরিত্রীরই কোনোখানে যে-সব রয়েছে অবিকল–
অনশ্বর, অবিচ্যুত, স্বপ্নবিদ্ধ, নির্লিপ্ত, সকাম ।

গতকাল একদিন

নির্মলেন্দু গুণ

গতকাল বড়ো ছেলেবেলা ছিল
আমাদের চারিধারে,
দেয়ালের মতো অনুভূতিমাখা মোম
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আমারা দেখেছি
শিখার ভিতরে মুখ ।
গতকাল ছিল জীবনের কিছু
মরণের মতো সুখ ।

গতকাল বড়ো যৌবন ছিল
শরীরে শরীর ঢালা,
ফুলের বাগান ঢেকে রেখেছিল
উদাসীন গাছপালা ।

আমরা দু’জনে মাটি খুঁড়ে-খুঁড়ে
লুকিয়েছিলাম প্রেম,
গতকাল বড় ছেলেবেলা ছিল
বুঝিনি কী হারালাম !

গতকাল বড়ো এলোমেলো চুলে
বাতাস তুলেছে গ্রিবা,
চুমু খেয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার
উজ্জ্বল মধুরিমা ।

গতকাল বড়ো মুখোমুখি ছিল
সারাজীবনের চাওয়া,
চোখের নিমিষে চোখের ভিতরে
চোখের বাহিরে যাওয়া ।

গোঁফ চুরি

সুকুমার রায়

হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জানত ?

দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা বসে ঝিম্‌ঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !

আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক'রে গোল,
হঠাৎ বলেন, "গেলুম গেলুম, আমায় ধরে তোল !"

তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউবা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, "কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস ।"

ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক করছে ঘোরাঘুরি,
বাবু হাঁকেন, "ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি !"

গোঁফ হারানো ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?
গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।

সবাই তাঁকে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষণো তা হয় না ।

রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
"কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি ।

নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
এমন গোঁফ তো রাখতো জানি শ্যামবাবুদের গয়লা ।

এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই"—
এই না বলে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায় ।

ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়,
"কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায় ।

আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর,
গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর ।

ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,
মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি ।

গোঁফকে বলে তোমার আমার – গোঁফ কি কারো কেনা ?
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা ।"

গাধার কান

রোকনুজ্জামান খান

একটা দড়ির দুদিক থেকে টানছে দুদল ছেলে
তাই না দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে জবর মজার খেলা
এমন খেলা খেলেই সবাই কাটিয়ে দেব বেলা।

কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়? ঘাবড়ে গেল মাথা
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা।
নেইকো দড়ি বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা
লেজে লেজে ধরব টেনে হবে দড়ির বাবা।

যেইনা বলা দুদল বানর দুদিক থেকে বসে
একের লেজটি ধরল টেনে জোরসে চেপে কষে।
বনের গাধা দাঁড়ায় মাঝে উঁচিয়ে দু'টি কান
বলে, আমার দুদিক থেকে কান ধরে দে টান
কান ধরে এই মাথা নিবি আপন দলে টেনে
জিতবি তবে এই খেলাতে, রাখিস সবাই জেনে।

অমনি দুদল হেঁইয়ো টানে- গাধার বিপদ ভারি
কান ছিঁড়ে সব হুমড়ি খেয়ে পড়ল সারি সারি
সাঙ্গ হল দড়ির খেলা বানররা সব হাসে
কান হারিয়ে গাধা শুধুই চোখের জলে ভাসে।

গ্রীষ্মের দুপুরে

ফজলুর রহমান

ঘাম ঝরে
দরদর
গ্রীষ্মের দুপুরে
খাল বিল
চৌচির,
জল নেই পুকুরে।

মাঠে ঘাটে
লোক নেই,
খাঁ খাঁ করে রোদ্দুর।
পিপাসায়
পথিকের
ছাতি কাঁপে দুদ্দুর।

রোদ যেন
নয়, শুধু
গনগনে ফুলকি।
আগুনের
ঘোড়া যেন
ছুটে চলে দুলকি।

ঝাঁঝ মাখা
হাওয়া এসে
ডালে দেয় ঝাপটা!
পাতা নড়ে
ফুল পড়ে
বাপরে কি দাপটা!

বিল ধারে চিল বসে'
ঘন ঘন ডাকে রে।
মাঝি বসে ঢুল খায়
খেয়াঘাট বাঁকে রে।