Showing posts with label . Show all posts
Showing posts with label . Show all posts

যাও, পত্রদূত

রফিক আজাদ

যাও পত্রদূত, বোলো তার কানে-কানে মৃদু স্বরে
সলজ্জ ভাষায় এই বার্তা: “কোমল পাথর, তুমি
সুর্যাস্তের লাল আভা জড়িয়ে রয়েছো বরতনু;
প্রকৃতি জানে না নিজে কতোটা সুন্দর বনভূমি।”
যাও, বোলো তার কানে ভ্রমরসদৃশ গুঞ্জরণে,
চোখের প্রশংসা কোরো, বোলো সুঠাম সুন্দর
শরীরের প্রতি বাঁকে তার মরণ লুকিয়ে আছে,
অন্য কেউ নয়, সে আমার আকণ্ঠ তৃষ্ণার জল:
চুলের প্রশংসা কোরো, তার গুরু নিতম্ব ও বুক
সবকিছু খুব ভালো, উপরন্তু, হাসিটি মধুর!

যাও পত্রদূত, বোলো “হে মাধবী, কোমল পাথর,
দাঁড়াও সহাস্য মুখে সুদূর মধুর মফঃস্বলে!
বিনম্র ভাষায় বোলো, “উপস্থিতি খুবই তো উজ্জ্বল,
যুক্তিহীন অন্ধ এক আবেগের মধ্যে, বেড়াজালে,
আবদ্ধ হয়েছো উভয়েই, পরস্পর নুয়ে আছো
একটি নদীর দিকে—বোলো তাকে, “অচ্ছেদ্য বন্ধন
ছিঁড়ে ফেলা সহজ তো নয় মোটে, কোমল পাথর!”
যাও পত্রদূত, বোলো—ভালোবাসা গ্রীষ্মের দুপুর?
নীরব দৃষ্টির ভাষা-বিনিময়—দিগন্ত সুদূর?

যদি ভালবাসা পাই

রফিক আজাদ

যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।

যে যে কারনে আমি কষ্ট পাই

মহাদেব সাহা

খেতে বসে, ঘুমোতে গিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে আমি কষ্ট পাই

কোনোদিন হঠাৎ ইচ্ছে হলে
গোলাপ ছিঁড়তে গিয়ে কষ্ট পাই
আমি কষ্ট পাই আকস্মিক, কথা
বলতে বলতে অপ্রত্যাশিতভাবে
আমি কষ্ট পাই রেস্তরাঁয়, পার্কে,
সিনেমা হলে, পোস্টাপিসের বারান্দায়
সহকর্মীদের পাশে বসে চা খেতে খেতে,
আমি প্রতিদিন বিভিন্নভাবে কষ্ট পাই

কারো সাথে কোনো মনোমালিন্য থেকে নয়,
কখনো কারো কুৎসা বা ভৎসনা শুনেও নয়
বন্ধুদের আপ্যায়নে ও উপেক্ষায় আমি কষ্ট পাই
ছবি দেখার মতো পয়সা না থাকলে
কষ্ট পাই, ছবি দেখতে গিয়েও কষ্ট পাই

অনেকদিন কারো চিঠি না পেলে
আমি কষ্ট পাই,
চিঠি পেয়েও কষ্ট পাই
আমার চোখের মধ্যে সূর্যাস্ত দেখে
আমি কষ্ট পাই
আমি কষ্ট পাই সকালবেলার আলোতে
অন্ধকারেও সারারাত

প্রতিদিন এমনি বহুভাবে কষ্ট পাই,
ফুলের জন্যে, পাখির জন্যে
সামান্য একটা শাদা পয়সার জন্যে
অহেতুক এমনি এমনি আমি
কষ্ট পাই।

যৌবন-চাঞ্চল্য

যতীন্দ্র মোহন বাগচী


ভুটিয়া যুবতি চলে পথ ;
আকাশ কালিমামাখা          কুয়াশায় দিক ঢাকা |
চারিধারে কেবলই পর্বত ;
যুবতী একেলা চলে পথ |
এদিক-ওদিক চায়          গুনগুনি গান গায়,
কভু বা চমকি চায় ফিরে ;
গতিতে ঝরে আনন্দ          উথলে নৃত্যের ছন্দ
আঁকাবাঁকা গিরিপথ ঘিরে |
ভুটিয়া যুবতি চলে পথ |

টসটসে রসে ভরপুর---
আপেলের মত মুখ          আপেলের মত বুক
পরিপূর্ণ প্রবল প্রচুর ;
যৌবনের রসে ভরপুর |
মেঘ ডাকে কড়-কড়          বুঝিবা আসিবে ঝড়,
একটু নাহিকো ডর তাতে ;
উঘারি বুকের বাস,          পুরায় বিচিত্র আশ
উরস পরশি নিজ হাতে!

অজানা ব্যাথায় সুমধুর---
সেথা বুঝি করে গুরুগুরু!
যুবতি একেলা পথ চলে ;
পাশের পলাশ-বনে          কেন চায় অকারণে?


আবেশে চরণ দুটি টলে---
পায়ে-পায়ে বাধিয়া উপলে!
আপনার মনে যায়          আপনার মনে গায়,
তবু কেন আনপানে টান?
করিতে রসের সৃষ্টি          চাই কি দশের দৃষ্টি?
---স্বরূপ জানেন ভগবান!

সহজে নাচিয়া যেবা চলে
একাকিনী ঘন বনতলে---
জানি নাকো তারো কী ব্যাথায়
আঁখিজলে কাজল ভিজায়!

যে কথা বলতেই হবে

গুন্টার গ্রাস
অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ

কেন আমি নিশ্চুপ, কেন চুপ করে আছি এতগুলি দিন
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় প্রকাশ্যে যা চলছে তা নিয়ে,
যার শেষে আমরা কেউ কেউ টিকে থাকব
বড় জোর পাদটীকা হয়ে।

ইরানিদের মুছে দেওয়ার মতো
‘আগাম যুদ্ধের’ এটি কোন অধিকার?
ইরানের শক্তিবলয়ে পরমাণু বোমা আছে এই অনুমানে
যা তারা আদায় করেছে হুংকারের বশ্যতায়,
জড়ো করা হুল্লোড়ের তোড়ায়।

বছরে বছরে যারা গোপনে স্তূপ করছে পরমাণু বোমা
নিন্দা নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই, তদন্ত নেই,
কেন আমি সে দেশের নাম নিতে এত দ্বিধান্বিত?
এ নিয়ে সবার যে মান্য নীরবতা,
যার নিচে আমারও নৈঃশব্দ মাথা নিচু,
সে তো এক অস্বস্তিকর মিথ্যা
তা আমাকে ছুড়ে দেয় অনুমেয় শাস্তির দিকে,
ছুটে আসে সহজেই ‘ইহুদিবিদ্বেষ’-এর গালাগাল।

নিজের তুলনাহীন গভীর অপরাধে
বারে বারে যার চলেছে জবাবদিহি,
আমার সে নিজের দেশের নাকি নিষ্ক্রান্তির কাল
(দিব্যি খেসারতের ছলে যা স্রেফ ব্যবসা)
আণবিক অস্ত্র নিয়ে আরেকটি ডুবোজাহাজ চলেছে ইসরায়েলে
কেবলই আতঙ্ক ছাড়া যার পরমাণু বোমার
কোনো প্রমাণ মেলেনি। আমি বলব, যে কথা বলতেই হবে।

কিন্তু কেন আমি এত দিন নীরব থেকেছি?
আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আমার নিজের অতীত
যে কালিমায় নোংরা তা তো কখনোই মুছে যাবে না।
যে ইসরায়েলের সাথে আমি এতটা নিবিড় কিংবা থাকব আগামীতে,
খোলামেলা সত্যের ঘোষণা সে যে মেনে নেবে, সে আশাও নেই।

কেন এখন, এই বুড়ো বয়সে,
দোয়াতের অবশিষ্ট কালি দিয়ে বলতে হবে:
ইসরায়েলের পরমাণুশক্তি বিপন্ন করে তুলবে
এরই মধ্যে ভঙ্গুর বিশ্বশান্তিকে?
কারণ যে কথা বলতেই হবে, কাল সেটা দেরি হয়ে যাবে।

কারণ জর্মন হিসেবে আজ কাঁধে এই বোঝা—
দৃশ্যমান ভবিষ্যৎ পাপের অস্ত্র আমাদেরই দেওয়া
কোনো উপায়েই আর মুছবে না দুষ্কর্মের এই দায়ভার।

মানি, আমি নৈঃশব্দ ভেঙেছি
কারণ পশ্চিমের ভণ্ডামিতে আমি ক্লান্তপ্রাণ;
এও আশা করি হয়তো অনেকেই নীরবতা থেকে মুক্তি পাবে
হয়তো তারা দাবি তুলবে খোলামেলা বিপদের জন্য যারা দায়ী
সেই সহিংসতা বর্জনের মুখোমুখি আমরা দাঁড়াই,
ইসরায়েল ও ইরানের সরকারকে বারবার এ কথা বোঝাবে হয়তো তারা
কোনো এক বিশ্বকর্তৃপক্ষকে তারা অনুমতি দিক
দুজনের পারমাণবিক সামর্থ্য ও সম্ভাবনা খোলামেলা তদন্ত করার।

বিভ্রমশাসিত এই এলাকায় শত্রুতায় পাশাপাশি বসবাস করা
ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের অন্য আর পথ খোলা নেই,
শেষমেশ, আমাদের কারোরই তা নেই।

প্রথম আলো ১৩-০৪-২০১২

যাবোই যাবো মাগো

এখলাসউদ্দিন আহমদ

এবার আমি যাবোই যাবো মাগো
পেরিয়ে সাত সাগর তেপান্তর
আমার উপর যতোই তুমি রাগো
এমন দিনে থাকবো না আর ঘর।

আকাশ নীলে আমার পক্ষীরাজ
ছুটবে বেগে ঝড়ের পাশে পাশে
সামনে পিছে ঘন মেঘের বাজ
জয়ধ্বনি দেবে মা উল্লাসে।

পেছন হতে যে যাই করুক মানা
দেখাক না ভয় দত্যি-দানোর বেশে
আজকে আমি শুনবো নাকো মানা
যাবোই যাবো ঘুমপরীদের দেশে।

সেথায় গিয়ে গাইবো আমি মাগো
তুফান সুরে ঘুমভাঙানী গান
বলবো হেঁকে দস্যু দামাল জাগো
বুলবুলিরা নিচ্ছে লুটে ধান।

নতুন সুরে উঠবে সবাই কাঁপি
ঘুমপরীরা ভুলবে রাতের ঘুম
ছিনিয়ে নিয়ে ঘুমঢুলুনির ঝাঁপি
বলবো হেঁকে আর নেবো না চুম।

শুনবো না আর ঘুমপাড়ানী ছড়া
গাইবো এবার ঘুমভাঙানী গান
বুলবুলিদের বাঁধবো কষে দড়া
আর দেবো না সোনার আমন ধান।

যে টেলিফোন আসার কথা

পূর্ণেন্দু পত্রী

যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূন্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।
যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।

অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসরঘন্টা শাখেঁর উলু
একশ বনের বাতাস এসে একটা গাছে হুলুস্থুলু
আজ বুঝি তার ইচ্ছে আছে
ডাকবে আলিঙ্গনের কাছে
দীঘির পাড়ে হারিয়ে যেতে সাঁতার জলের মত্ত নাচে।
এখনো কি ডাকার সাজে সাজেনি?
যে টেলিফোন বাজার কথা বাজেনি।

তৃষ্ণা যেন জলের ফোঁটা বাড়তে বাড়তে বৃষ্টি বাদল
তৃষ্ণা যেন ধূপের কাঠি গন্ধে আঁকে সুখের আদল
খাঁ খাঁ মনের সবটা খালি
মরা নদীর চড়ার বালি
অথচ ঘর দুয়ার জুড়ে তৃষ্ণা বাজায় করতালি
প্রতীক্ষা তাই প্রহরবিহীন
আজীবন ও সর্বজনীন
সরোবর তো সবার বুকেই, পদ্ম কেবল পর্দানশীন
স্বপ্নকে দেয় সর্বশরীর, সমক্ষে সে ভাসে না।
যে টেলিফোন আসার কথা সচরাচর আসে না।

যাত্রা-ভঙ্গ

নির্মলেন্দু গুণ

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই৷

হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি৷

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷

তখন আমি একটু ছোঁব,
হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরনী নায়ে৷

নায়ের মাঝে বসব বটে,
না-এর মাঝে শোব৷
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,
দু:খ দিয়ে ছোঁব৷

তুই কেমন করে যাবি?

যশের মন্দির

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

সুবর্ণ-দেউল আমি দেখিনু স্বপনে
অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে,
বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,
বহুবিধ রোধে রুদ্ধ উর্দ্ধগামী জনে!
তবুও উঠিতে তথা--- সে দুর্গম স্থলে---
করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে
বহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকেলে,
না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে।
ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে।---
শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,
মৃদু হাসি; ``ওরে বাছা, না দিলে শকতি
আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?
যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,
অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!''

যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না

আবিদ আজাদ

যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে যুদ্ধ শেষের
ভাঙা-পোড়ো একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমি
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে স্কার্ট পরা বুড়ি-
বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা;

যেখানে রুপালি

অজিত দত্ত

যেখানে রুপালি ঢেউয়ে দুলিছে ময়ূরপঙ্খী নাও,
যে-দেশে রাজার ছেলে কুমারীকে দেখিছে স্বপনে,
কুঁচের বরন কন্যা একাকী বসিয়া বাতায়নে
চুল এলায়েছে যেথা --- কালো আঁখি সুদূরে উধাও;
যে-দেশে পাষাণ-পুরী, মানুষের চোখের পাতাও
অযুত বত্সরে যেথা নাহি কাঁপে ইষত্ স্পন্দনে,
হীরার কুসুম ফলে যে-দেশের সোনার কাননে,
কখনো, আমার পরে, তুমি যদি সেই রাজ্যে যাও;

তাহ'লে, তোমারে কহি, সে-দেশে যে-পাশাবতী আছে,
মায়ার পাশাতে যেই জিনে লয় মানুষের প্রাণ,
মোহিনী সে-অপরূপ রূপময়ী মায়াবীর কাছে,
কহিয়া আমার নাম শুধাইও আমার সন্ধান;
সাবধানে যেও সেথা, চোখে তব মোহ নামে পাছে,
পাছে তার মৃদু কণ্ঠে শোনো তুমি অরণ্যের গান |

যাতায়াত

হেলাল হাফিজ

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেউ বলেনি ভাল থেকো সুখেই থেকো
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো।

জন্মাবধি ভেতর থেকে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্স্থালি
বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।

ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই
দুঃসময়ে এতটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।

কেউ বলেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালবাসি।

যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।

যে আমাকে প্রেম শেখালো

মাকিদ হায়দার

যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে

যদি নির্বাসন দাও

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ

যেতে নাহি দিব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি ; বেলা দ্বিপ্রহর ;
হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর ।
জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্ন-বাতাসে ; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায়