Showing posts with label alk004. Show all posts
Showing posts with label alk004. Show all posts

অনঙ্গমোহিনী দেবী

কবি-পরিচিতি  রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনী দেবী - ত্রিপুরার মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি শৈশব কাল থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। পিতা বীরচন্দ্র মাণিক্যের উৎসাহদানেই তাঁর কবিতার বিকাশ ঘটে।তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “কণিকা” (১৮৯৯), “শোকগাথা” (১৯০৬), “প্রীতি” (১৯১০) প্রভৃতি।কবিতা গ্রন্থ "শোকগাথা" কবির স্বামীর প্রয়াণের পর লেখা। এই গ্রন্থের কবিতাগুলি, রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনী দেবী, তাঁহার স্বর্গবাসী স্বামীর চরণে ‌উৎসর্গ করিয়াছেন ; এবং তাঁহারই স্মৃতিতে গ্রন্থের সকলগুলি কবিতা রচিত।
তাঁর কবিতার ভাষারীতি ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল এবং আন্তরিক।

সূচী:
পেয়েছি
বিদায়
মরণ
শোকগাথা কাব্যগ্রন্থ


শোকগাথা কাব্যগ্রন্থ থেকে অংশ বিশেষ

রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনী দেবী

|| ১ ||
জন্মশোধ বিদায়ের বিষাদ-চুম্বন,
যাতনায় ক্লিষ্ট সেই বিবর্ণ বদন!
আকুল বিষাদ ভরে হাতে হাত রাখি
চেয়েছিল, অশ্রুপূর্ণ প্রভাহীন আঁখি!
এ বিষাদ-ছবি জাগে হৃদি-দরপণে,
এ করুণ-গীতিভাসে মৃদু গঞ্জরণে
আয়স্তী জীবনে মম, প্রভাতে সন্ধ্যায়
শুধু সেই স্মৃতি রেখা হৃদয়েতে বায়!
হৃদয়ের রক্ত দিয়ে করিয়ে পোষণ,
রাখিয়াছি সেই স্মৃতি করি সযতন।

|| ২ ||
আজিকে নিবিড় মেঘের আঁধারে
ঊষার মলিন আলোকে ভায় ;
নিরাশা-হুতাশ ঘেরিছে আমারে
ম্লান মুখে আশা চলিয়া যায়!
ডুবে যায় চাঁদ পশ্চিম গগনে
নিবু নিবু আলো মিশিয়া যায় ;
সরসীর নীল সলিল শয়নে
মূরছি কুমুদী পড়িছে হায়!

* * * *

আজিকে কেবলি সাধ হয় মনে
ঊষার কোলেতে মিশিয়া যাই,
মেঘের মেদুর বাতাসের সনে
সুদূর আকাশে ভাসিয়া যাই।
অথবা অকূল সাগরের তীরে
বসিয়া দেখিব তরঙ্গ মালা ;
সজনী গো শুধু কহিব সমীরে
আমার অসহ মরম জ্বালা।

বিদায়

অনঙ্গমোহিনী দেবী

চিরতরে চলে গেছে হৃদয়ের রাজ,
অতল বিষাদে মোরে ডুবাইয়ে আজ!
নিয়ে গেছে সুখ সাধ সুখের বাসনা,
রেখে গেছে জন্ম শোধ হৃদয় বেদনা!
সে মম পুষ্পিত শুভ্র বসন্ত জীবন,
গেছে যবে, সাথে গেছে আমার ভূবন!
নিশীথের সুখময় জোছনা মগন,
মধ্যাহ্নের আলোময় উজ্জ্বল গগন ;
প্রভাতের মৃদু মন্দ মলয় বাতাস,
ধূসর রক্তিম চারু সন্ধ্যার আকাশ ;
কুসুমিত সুবাসিত নিকুঞ্জ কানন,
ভ্রমর গুঞ্জিত সদা সুখের সদন!
এ সকলি গেছে চলে তারি সাথে সাথে
এবে নিশা দেখা দেয় জীবন-প্রভাতে!
নিবে গেছে জীবনের শুভ্র দীপ্তি আলো,
প্রাণে শুধু নেমে আসে ঘোর ছায়া কালো!
গিয়েছে সকলি মম কিছু নাহি আর,
রয়েছে কেবল স্মৃতি আর অশ্রুধার!

পেয়েছি

অনঙ্গমোহিনী দেবী

তোমারে আমি রেখেছি বুকে
               সুখের তরে নয়,
তোমারে আমি পেয়েছি দুখে
               দুখেরে করি জয়!

                               আকাশ ছেপে তোমার প্রীতি
                                               বাতাস সম আসে
                               শীতলি’ মম চিত্ত নিতি
                                               বিচরে প্রাণ-বাসে!

আসে গো সুখ, দুঃখ দলি
               চাহিনে আমি তারে ;
বিকাশে নব প্রীতির কলি
               সুরভি মধ্য-ভারে।

                               এ দেহ প্রাণ, তোমার কাছে
                                               দিয়াছি সঁপে আমি,
                               আমার গানে জড়ায়ে আছে
                                               তোমার সুর স্বামী!

এপারে কভু পাবনা আমি!
               যেদিন মম সাঁঝে---
ওপারে যাব, জীবন স্বামী!
               উদিবে হৃদিমাঝে।

                               দোঁহের প্রীতি-অভিজ্ঞানে
                                               চিনিব দোঁহে ত্বরা,
                               তৃপ্ত মোরা হইব, পানে
                                               অমৃত চিত-ভরা!

মরণ

অনঙ্গমোহিনী দেবী

["প্রীতি" কাব্য, ১৯১০, থেকে নেওয়া]

এস ওগো, এস এস আমার মরণ!
এস হো সুন্দর সৌম্য, সুনীল বরণ!
বাজিয়া উঠিছে শঙ্খ সন্ধ্যার আরতি!
তুমি এস হৃদিতলে মন্দগতি।
শ্যামস্নিগ্ধ গোধূলিতে করিব বরণ,
এস সখা, বরবেশে মন্থর-চরণ।
আমরা দু’জন যাত্রী অনন্ত পথের,
বাজিছে অধীরে ভেরী তোমার রথের।
হৃদি-অন্তঃপুর হতে পরাণ-বধূরে
অলক্ষ্যে লইয়া যাও অনন্ত সুদূরে!
দেখিবে না, জানিবে না, কেহ কভু আর
পাবে না উদ্দেশ খুঁজি এ জগতে তার!
ফুটিয়া উঠিছে তারা রঙীন আকাশে,
পতাকা চঞ্চল তব সন্ধ্যার বাতাসে।
শিথিলিত হয়ে আসে জীবন-বন্ধন---
নিমীলিত হয়ে আসে অবস নয়ন!