মাতৃভক্তি

কালিদাস রায়

বায়েজিদ বোস্তামী-
শৈশব হতে জননীর সেবা করিতেন দিবাযামী।
দুপুর রাত্রে জননী জাগিয়া ডাকিলেন,'বাছাধন,
বড়ই পিয়াস পানি দাও' বলি মুদিলেন দু'নয়ন।
দেখিল বালক ঘরের কোণের কলসিতে নেই পানি,
বহুদূর পথ ঝরনা হইতে কলসি ভরিয়া আনি।

মায়ের তৃষ্ণা মিটাইবে বলি গভীর অন্ধকারে
ছুটিয়া বাহির হইল একাকী কলসি লইয়া ঘাড়ে।

জল ঢালি পিয়ালায়
সুপ্তা মাতার নয়ন শিয়রে দাঁড়ায়ে রহিল ঠায়।
ভাঙালে নিদ্রা হবে অপরাধ, কখন ভাঙিবে নিঁদ,
সেই ভরসায় পানি হাতে খাঁড়া রহিল যে বায়েজিদ।

পূর্ব গগন ফর্সা হইল,ডাকিয়া উঠিল পাখি,
জননী মেলিল আঁখি।
দেখিল শিয়রে দাঁড়ায়ে রয়েছে দশ বছরের ছেলে
পানি হাতে কেন, বুঝিল না মাতা প্রথম নয়ন মেলে।
সহসা পড়িল মনে,
গভীর রাতে পিপাসায় পানি চেয়েছিল বাছাধনে।
কহিল মা, মরি মরি!
বাছারে আমার, পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরি
দাঁড়াইয়া আছ? ঘুমাওনি আজ?' চোখে এল জল ভরি।
পুত্রেরে কোলে নিয়ে মা চুমিল বার বার মুখখানি।
কহিল জননী,'নয়নের মণি, সাধারণ শিশু নও,
খোদার দোয়ার বরকতে তুমি জগতপূজ্য হও।
পুত্র গরবে গর্বিত বুকে,খোদা, স্মরি তব নাম,
তোমারে আমার জীবনের এই সম্বল সঁপিলাম।'
বিফল হয়নি মায়ের আশিস, হৃদয়ের প্রার্থনা
জগৎ-বন্দ্য জ্ঞানগুরুদের বায়েজিদ একজনা।

No comments:

Post a Comment