অরুনের আগমন পাইয়ে সন্ধান,
অন্ধকার সনে নিশি করিলা প্রস্থান |
উঠ উঠ দিবাকর, কিবা রূপ মনোহর,
অপরূপ আভাময় তোমার বিমান |
ধরা ধনী নীলাম্বর করি পরিহার,
পরিলেন পীতবাস কিরণে তোমার ||
নাহি আর অন্ধকার কোথা পলাইল ?
গিরীশ-গহ্বরে বুঝি গিয়ে লুকাইল |
কেহ ভানুর ডরে কাফ্ রীর কলেবরে,
কেহ বা কামিনী-কেশে মিশাইল |
অবশিষ্ট অন্ধকার অন্ধকূপে যায়,
খলের হৃদয়ে গিয়ে অথবা মিশায় ||
বিষাদে বিষন্নমুখ বিহঙ্গম কুল
নীরবে বসিয়ে ডালে আঁধারে আকুল,
পেয়ে তব দরশন, আনন্দে মোহিত মন,
গাইল বিভাস রাগে সঙ্গীত মঞ্জুল |
কলকণ্ঠ সহকারে ললিত কুহরে,
বিমোহিত জন মন সুমধুর স্বরে ||
নিরানন্দে নৈশ নীরে নলিনী সুন্দরী,
বিষাদিত ছিল দামে বদন আবরি ;
বিভাকর নবোদয়ে, আনন্দে প্রফুল্ল হয়ে,
হাস্যমুখী সরোজিনী সরসী-ঈশ্বরী ;
দোদুল্ল প্রফুল্ল কায় প্রভাত সমীরে,
হেরে পতি বুঝি সতী কাঁপে ধীরে ধীরে ||
অনল বেলুনবত্ বিমল আকাশে,
ভাসি ভাসি প্রভাকর প্রভা পরকাশে ;
প্রাপ্ত হয়ে শুভালোক, পুলকে পূর্ণিত লোক,
স্বকার্য্য সাধনে সব নিমগ্ন আশ্বাসে |
কৃষক চলিল মাঠে স্কন্ধে হল ধরা,
সুকুমার তাপে মাটি হয়েছে উর্ব্বরা ||
মধ্যাহ্নে মিহির, তব করাল কিরণ,
ফিরাইতে তব পানে পারি না নয়ন |
কর রশ্মি বিতরণ, অনুমান বরিষণ,
অনল-কণিকাপুঞ্জ উত্তাপ ভীষণ |
সে সময় সুশীতল তরুর ছায়ায়
বসিলে দুর্বার দলে জীবন জুড়ায় ||
দে জল দে জল বলে ডাকে চাতকিনী;
পিপাসায় প্রাণ যায় তবু পাতকিনী
খাবে না নদীর নীর, নীরদ হইতে ক্ষীর
পড়িবে, জুড়াবে যবে তপিত মোদিনী,
উড়িয়ে উড়ায় পান করিবে তাহায় ।
স্বভাব-অঙ্কিত রেখা কে ছাড়িয়ে যায় ?
সে সময় সুশিতল বরফের জল
পরিতুষ্ট কর্ দেয় হৃদয়-কমল;
তৃষ্ণায় উত্তপ্ত প্রাণ, বার বার করে পান,
অনুমান পশিয়াছে হৃদয় অনল ।
কে করিবে শীতকালে বরফে যতন,
অভাব বিহনে ভাল লাগে কি পুরণ ?
অপার মহিমা তব আদিত্য মহান,
পৃথিবীর পয়ঃ লয়ে পৃথ্বীকে প্রদান ।
আতপে তাপিয়ে জল, উঠাইয়ে বাষ্পদল,
নবীন নীরদকূলে কর বিনির্মাণ ।
বারিরূপে বারিদের ধরায় পতন,
ফিরে তার কোলে যেন এল হারাধন ||
তেজঃপুঞ্জ ত্বিষাম্পতি প্রচণ্ড প্রতাপ,
ক্ষুদ্র রাহু করে গ্রাস এ বড় প্রলাপ !
লোকে করে হাহাকার, দিবসেতে অন্ধকার,
তপন-নিধন হায় এ কি পরিতাপ !
পুনঃ প্রকাশিত তুমি, পৃথ্বী প্রভাময়,
লুকোচুরি খেলা তব গ্রহণ তো নয় ||
জ্যোতির্ব্বিদ পণ্ডিতের স্থির বিবেচনা,
গ্রহণ রাহুর গ্রাস করিব রচনা ;
গতিক্রমে নিশাপতি, পৃথ্বী রবি মধ্যে গতি,
একটি সরল রেখা তিনের ধারণা,
তখন তড়নে শশী করে আবরণ,
অমনি অবনিতলে প্রকাশ গ্রহণ ||
নয়নে ভুলে বলি সূর্য্যের “গমন”,
চলিতে তরণী যথা কূলের চলন ;
স্থিতভানু এক স্থলে, ঘুরিতেছে গ্রহদলে,
অবিরত রবিকায় করিয়ে বেষ্টন ।
মার্ত্তণ্ড প্রকাণ্ড অঙ্গ নাহি পরিমান,
ধরায় অজস্র গুণ হয় অনুমান ||
হয় ত সবিতা তুমি সহ গ্রহগণ,
শ্রেষ্ঠতর সূর্যে বেড়ে করিছ ভ্রমণ ;
তোমার সমান কত ঘোরে ভানু অবিরত,
গ্রহ সহ সেই সূর্যে করিয়ে বেষ্টন ;
শ্রেষ্ঠতর সূর্য পরে স্বদলে লইয়ে
ভ্রমিতেছে শ্রেষ্ঠতম তপনে বেড়িয়ে ||
তা বড় তা বড় সুর্য্য আছে পর পর,
অনাদি অনন্ত দেব পরম ঈশ্বর,
বিরাজিত সর্ব্বোপর, জ্যোতির্ম্ময় কলেবর,
নিমেষে হতেছে সৃষ্টি শত প্রভাকর |
গগনে অগণ্য তারা কে তারা কে জানে,
তা বড় তা বড় সূর্য্য জ্যোতির্ব্বিদে মানে ||
ল্যাপল্যাণ্ডে একবার হইয়ে উদয়,
ছয় মাস প্রভাকর প্রকাশিত রয় ;
দেবের আরতি যায়, ব্রাহ্মণেরা নাহি পায়,
সন্ধ্যা করিবার কাল সন্ধ্যার সময়,
মুসলমানের রোজা ভাঙ্গে না ছ মাস,
হয় ধর্ম লোপ নয় জীবন বিনাশ ||
ছয় মাস নিরন্তর থাকে অন্ধকার,
কালনিশি অনুরূপ নিশির আকার ;
নিশিতে করিছে স্নান, নিশিযোগে পূজা ধ্যান,
সম্পাদন নিশিযোগে আহার বিহার ;
সাগরে মারিয়ে তিমি তেলের সঞ্চয়,
ছয়মাস অবিরত তাতে আলো হয় ||
যমুনা তনয়া তব শ্যামল বরণ,
বিরাজিত তটে তার সুখ-বৃন্দাবন ;
যমুনার উপকূলে, লইয়ে গোপিনীকুলে
করে কেলি বনমালী মুরলীমদন |
সুবাসিত স্বচ্ছ বারি শীতলতাময়,
স্নানে পানে পরিতৃপ্ত মানব নিচয় ||
দুর্দ্দান্ত অঙ্গজ তব ভঙ্গি ভয়ঙ্কর,
শুনিলে তাহার নাম অঙ্গে আসে জ্বর ;
আতঙ্গ মণ্ডিত রূপ, আঁখি দুটি অন্ধকূপ,
সুগোল গভীর কাল ঘোরে নিরন্তর,
উচ্চ গণ্ডে কালশিরা করাল ভুজঙ্গ,
নাকের নাহিক চিহ্ন কেবল সুরঙ্গ ||
ভয়ানক গল্লাকাটা দন্তরেখা যায়,
বিষমাখা খড়গশ্রেণী যেন শোভা পায় ;
পেটের প্রকাণ্ড খোল, অবিরত গণ্ডগোল,
আবরণ চর্ম্ম উড়ে গিয়াছে কোথায়,
নাড়ীতে জরিত কত ভূত ভয়ঙ্কর,
গৃধুনী শকুনী শুনি শিবা নিশাচর ||
এ ষণ্ড মর্ত্তণ্ড তব যোগ্য সুত নয়,
বাপের মতন ব্যাটা কর্ণ মহাশয়,
সাহসিক বলবান, অকাতরে করে দান,
কল্পতরু হয় জ্ঞান ধরায় উদয় ;
দয়ার কারণে তার দাতা কর্ণ নাম,
যা যাচিবে তাই দিবে পূর্ণ মনস্কাম ||
No comments:
Post a Comment