ব্যাং

বুদ্ধদেব বসু

বর্ষায় ব্যাঙের ফুর্তি | বৃষ্টি শেষ, আকাশ নির্বাক ;
উচ্চকিত ঐকতানে শোনা গেল ব্যাঙেদের ডাক |

আদিম উল্লাসে বাজে উন্মুক্ত কণ্ঠের উচ্চ সুর |
আজ কোনো ভয় নেই-- বিচ্ছেদের, ক্ষুধার মৃত্যুর |

ঘাস হ'ল ঘন মেঘ ; স্বচ্ছ জল জ'মে আছে মাঠে
উদ্ধত আনন্দগানে উত্সবের দ্বিপ্রহর কাটে |

স্পর্ষময় বর্ষা এল ; কী মসৃণ তরুণ কর্দম !
স্ফীতকণ্ঠ, বীতস্কন্ধ-- সংগীতের শরীরী সপ্তম |

আহা কী চিক্কণ কান্তি মেঘস্নিগ্ধ হলুদে-সবুজে !
কাচ-স্বচ্ছ উর্ধ্ব দৃষ্টি চক্ষু যেন ঈশ্বরের খোঁজে

ধ্যানমগ্ন ঋষি-সম | বৃষ্টি শেষ, বেলা প'ড়ে আসে ;
গম্ভীর বন্দনাগান বেজে ওঠে স্তম্ভিত আকাশে |

উচ্চকিত উচ্চ সুর ক্ষীণ হ'লো ; দিন মরে ধুঁকে ;
অন্ধকার শতচ্ছিদ্র একচ্ছন্দা তন্দ্রা-আনা ডাকে |

মধ্যরাত্রে রুদ্ধদ্বার আমরা আরামে শয্যাশায়ী,
স্তব্ ধ পৃথিবীতে শুধু শোনা যায় একাকী উত্সাহী

একটি অক্লান্ত সুর ; নিগূড় মন্ত্রের শেষ শ্লোক --
নিঃসঙ্গ ব্যাঙের কণ্ঠে উত্সারিত -- ক্রোক, ক্রোক, ক্রোক |

No comments:

Post a Comment