রক্তাম্বর-ধারিণী

কাজী নজরুল ইসলাম
["অগ্নিবীণা" থেকে নেওয়া]

রক্তাম্বর পর মা এবার
        জ্ব’লে পুড়ে যাক শ্বেত বসন ।
দেখি ঐ কার সাজে মা কেমন
       বাজে তরবারি ঝনন্-ঝন্ ।
সিঁথির শিঁদুর মুছে ফেল মা গো,
       জ্বাল সেথা জ্বাল কাল-চিতা ।
তোমার খড়গ-র্কত হউক
       স্রষ্টার বুকে লাল ফিতা ।
এলোকেশে তব দুলুক ঝঞ্ঝা
       কাল-বৈশাখী ভীম তুফান,
চরণ-আঘাতে উদ্গারে যেন
       আহত বিশ্ব রক্ত-বান ।
নিঃশ্বাসে তব পেঁজা-তুলো সম
       উড়ে যাক মা গো এই ভূবন,
অ-সুরে নাশিতে হউক বিষ্ণু-
       চক্র মা তোর হেম কাঁকন !
টুঁটি টিপে মারো অত্যাচারে মা,
       গল-হার হোক নীল-ফাঁসি,
নয়নে তোমার ধূমকেতু-জ্বালা,
       উঠুক সরোষে উদ্ভাসি' ।
হাস খল খল, দাও করতালি,
       বল হর হর শঙ্কর!
আজ হ'তে মা গো অসহায় সম
       ক্ষীণ ক্রন্দন সম্বর
মেখলা ছিঁড়িয়া চাবুক কর মা,
       সে চাবুক কর নভ-তড়িৎ,
জালিমের বুক বেয়ে খুন ঝ'রে
       লালে লাল হোক শ্বেত হরিৎ ।
নিদ্রিত শিবে লাথি মার আজ,
       ভাঙো মা ভোলার ভাঙ-নেশা,
পিয়াও এবার অ-শিব গরল
       নীলের সঙ্গে লাল-মেশা ।
দেখা মা আবার দনুজ-দলনী
       অশিব-নাশিনী চণ্ডী-রূপ ;
দেখাও মা ঐ কল্যাণ করই
       আনিতে পারে কি বিনাশ-স্তূপ ।
শ্বেত শতদল-বাসিনী নয় আজ
       রক্তাম্বর-ধারিণী মা,
ধ্বংসের বুকে হাসুক মা তোর
        সৃষ্টির নব পূর্ণিমা!

No comments:

Post a Comment